বৈশাখ
কৈশোরক এই কুয়ো... ভিতরে প্রত্ন-ছায়া... ছোবল...
আর আমি জর্জরিত- মধ্যযাত্রা ভেঙে দাঁড়িয়েছি
এই ভুল চন্দনের বনে... আহা রেশমী-কল্লোল
ছুঁয়ে ঝরে বেলফুল... আমি তবু বিভীষায় গেছি...
আর এই ধূধূরেখা... লাল-দিগন্তের রৌদ্রস্নানে
আমি মরুপাখিদের পড়শি... পুনশ্চ ইকারুস...
তবু আমাদের ছোটো নদী ঘুমালো কী অভিমানে
ও আঁচল পাল নয়... আহা মুর্খ-তরুণ পুরুষ...
শুধু এই পাটল হাওয়া রেখে যায় পাঁজরে প্রবাহ
কী আরক্তিম আল্পনা- করতল মেলে রেখো তুমি...
তবু এই দেহের শ্রেষ্ঠতম শিল্প-আমার দাহ
দূরের দেশের শিরা- ও প্রবালিকা পুণ্য-মনোভূমি...
এইসব শিলাস্বপ্ন- সকরুণ আর্দ্রতা বিলাস
বোশেখে বিগ্রহ সেবা... মোঘ-মর্মে বিষণ্ন অধ্যাস...
জ্যৈষ্ঠ
রৌরবে শুভম যাত্রা- জড়িয়েছি বৃশ্চিকের জালে
তবু এই আত্মনাশ আমার অমৃতব্য মহিমা...
আমি তো কেবলি অশ্রু- তুমি থাকো প্রবালে প্রবালে
অন্যূন সংবেদে আজ রেখে যাই আমার অসীমা...
এই জন্ম তবে কোনো প্রাপণের কাহিনী জানে না
তবু অবমত... যেনো অবধূত... হায় ক্রুবাদুর-
ধূলিমাঠে মৃগয়ায়- স্বপ্ন দিয়ে শুধু স্বপ্ন কেনা
খুব প্রিয় ছিলো একদিন... আজ রৌরবে মুর্মুর...
তবু শোভাযাত্রা- সুন্দরের অলৌকিক লীলায়ন
রেখে যাই পৃথিবীর প্রথাবিনাশের দিনলিপি...
একে যদি অভিমান বলি- শুদ্ধনাম সস্নেহে পতন
তবু এই পতনেরে ভালোবাসিলাম ধিকি ধিকি...
গভীরে অনেক গান- মৌনতায় বাজে কী বিবাগে
জ্যৈষ্ঠের সামান্য দাহ... লিখি মৃত্যু... হৃদয়-নৈদাঘে...
আষাঢ়
আজ শুধু গুঁড়ি গুঁড়ি স্মৃতি... সমাহিত ধূসর সঙ্গীত
বিভাজিত করে বুদবুদ: তাই অশ্রুজল থেকে
এই পারদ এনেছি অন্ধতায়- অর্থাৎ অতীত
আর তাই জল দেখলেই এই স্বপ্ন মাছ হয়ে
যায় মগ্নস্রোতে- সেই সর্গে সন্তরণ ছাড়া এই
অতিক্রম্য অনাবাসে যেতে পারি কতোটা বিস্ময়ে?
অতএব, সমুদ্র ছাড়া আর কোনো মাতৃত্ব নেই...
তবু এই এ্যাকুরিয়ামের কালে... ক্রান্তি-সংশ্লেশন
আর সীমিত সংবেদে, মনে পড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি স্মৃতি...
তবু মাতৃত্বের গন্ধ... শিশুসাধ ও মৎস্যপ্রবণ...
হায় গৃহশিল্প... দ্ব্যর্থপাঠে আজ অবগাঢ়-গীতি...
পরাণে প্রাবৃষ্য দিন আরো ঊর্ধ্বে- দ্বগ্ধ ওফেলিয়া
আষাঢ়ষ্য দিবসের গান ওই যেতেছে বহিয়া...
শ্রাবণ
আরও স্মৃতির অংশ- অধিপ্রাণে গাইছে অঝোর
এই বিষণ্ন-পুরাণ আহা আমৃত্যু বৃশ্চিকা-প্রিয়...
আর আমি জলদাস... শুভেচ্ছায় অসামান্য ঘোর
ওই লীথি পাড়ে-লুব্ধ... তুমি মোরে ভাসাইয়া দিও...
তবু এই তমোহর, তরুণাভ দিন- সমারূঢ়
ছোটে জীবনের গান... প্রপতনে বিমুগ্ধ-পীড়ন
আমি প্রার্থনা করেছি- অতএব নির্বেদে নির্ব্যূঢ়
এই আত্মনাশ আমার মহত্ব... গুহ্য বিধূবন...
আমি তবু লিখি ওই জলের কাহিনী- জলদাস
কী সাধে বিন্যাস করি আজ আর্দ্র-কোমল বাসনা
তবু মহত্বের দিকে যাই যেনো শিশুবালিহাঁস...
এতো যে জলের গল্প- জল তার কিছুই জানো না
আরও ঘুমিয়ে গেছে- ঘুমোবে না দগ্ধ ব্যাকুলতা...
ভাদ্র
প্রকাশ্যে লুকিয়ে থাকি- আর উত্তমপুরুষে আমি
মাঝে মাঝে কাউকে পাইনি... জীবনের পাশাপাশি
মৃত তবে এই মহার্ঘ-বাসনা, কোনো শিরোনামেই
এঁকে দিতে পারি না তো... শুধু অনুভব রাশি রাশি...
তবে কি ঐচ্ছিক এই শারদের সাতাশ পার্বণ
হঠাৎ থমকে দাঁড়াই- কী দারুণ পায়ের প্রতিভা...
তবু এই অচেনা দূরের দেশে আমার মতোন
আর কেউ কোনোদিন আসে নাই একাকী যদিবা-
তবে আমি কি এসেছি আজ? আগমন-অভিনয়
যদি বলি... আরো অভিনয় করি উত্তমপুরুষ...
এতোদিন পর... আহা গ্রীনরুম- অন্ধকারময়
দৃশ্যে আমি তবু দৃশ্যময়... প্রতিযেসাসের ক্রুশে...
এইবার অশ্রু দিয়ে লিখে দাও বিস্তীর্ণ এলিজি
ভাদরে মূর্ছনা ছিলো কবিনামা চৈতন্যের ঝিঁ ঝিঁ...
আশ্বিন
একদিন শরতের ভোরে একফালি চাঁদের অত্যাচারে হরিতালী ভেসে যায়
অমৃতস্য বিধুরতা- বিন্দু বিন্দু অনুস্মৃতি করি
আমি তো ছিলাম ওই গোপনেষু প্রত্নবীজে... ধ্যানে
তবে এই রূপায়ন... অবিমৃষ্য মাতাল মর্মরি
আমাকে উড়িয়ে নিলো শিলিভূত স্বপ্ন-অভিজ্ঞানে...
প্রসঙ্গত মনে পড়ে মেঘশিমুলের গল্পগুলি
আমাকে উড়িয়ে নিলো অতিদূর শাদা-সহোদর!
প্রতিবিশ্বে করি বাস- আর ওই তাসের গোধূলি
ভালোবাসি বলে বিলোচনে ভাসে ঘুম... প্রিয় ঘর...
তবু এই প্রাবাসিকী- আমাকে খায়নি বিস্মরণ
আহা দগ্ধ বিধূবন... আর ঝাঁপটে দিয়েছি ডানা
তবু তীব্র স্বপ্ন দৃশ্য- ভেসে আসে গাঢ় সম্মোহন
তাই কোনো অভিপ্রায় নেই... অর্থহীন আজ হা-না...
তবু লুব্ধ রূপায়ন- প্রাত্যহিকে পুনশ্চ অতীত
আশ্বিনের ভোরবেলা বেজেছিলো ভূমিষ্ট সঙ্গীত...
কার্তিক
কথাকে কোলাজ করি তবু কার কথা বেশি বলি
এই পর্বাহের প্রাহ্নে- কার মুখ মুখস্ত ভীষণ?
আর কোন পথে হেঁটে স্মৃতিগত দৃশ্যাবলী
এখনো উজ্জ্বল- এই এক পৃথিবীর আবাসন?
শুধু জানি- আমি কোন পাখিদের পড়শি ছিলাম
আর ওই জোনাকির জীবনীকে প্রপাঠ্য করেই
অন্ধকারে বহুবার হারিয়েছি... হন্য-ধাবমান
এই আশ্চর্য প্রতিভা- তবু ধূসরিত মুহূর্তেই...
তবু এই প্রদোষের প্রেষণায়- শাশ্বত সঙ্গীতে
কার কথা বেশি বলি... কার মুখে মার্গের স্মারক
আমার অবলীঢ় অন্বেষা- আহা অমল স্মরিতে
উল্লেখ্য, নিনাসের নির্জন স্মৃতিসৌধ... সম্পূরক!
তবু এই পার্বণের দেশে ছিলো প্রেম... পূণ্য ঘোরে
কার্তিকের কথাগুলি ঘুমিয়েছে দাসের শিয়রে...
অঘ্রাণ
যতোবার দৃশ্য ভাঙি- তারপর ভিতরে ভাসাই
এই মন পবনের নাও... ভেসে যাই কতোদূরে
শিশুবালিহাঁস... কান্ত... কোনো ঝিলে সামান্য দাঁড়াই
মুগ্ধ মনোহরে? আহা- বেজে ওঠে হাওয়ার ঘুঙুর...
এইভাবে সাজিয়েছি কল্পদ্রুমতলা- তীর্থায়ণ
তবু হৃদিপাতে শল্যহীন গায় গেয়েছি গভীর...
একে যদি ভালোবাসা বলি... শুদ্ধনাম প্রার্থিত পতন
তবু এই পতনের ভালোবাসিলাম তপোধীর...
এছাড়া অন্যান্য ধ্বনি- মূর্ছনায় ভেঙেছি পরিধি
আর এই শিলীমুখ পুড়িয়েছি ধুম্র পৌরাণিকী-
কোন প্রতিমার মর্মে, আমি এই একলব্য নিধি
শিশুবালিহাঁস- আহা প্রতিদিন ভালোবাসা শিখি...
তবু এই শস্যভূমি... অধিকন্তু শস্যহীন মনে
অঘ্রানের এতো ঘ্রাণ ভেসে যাই নাগেশ্বর বনে...
পৌষ
কখনো এমন হয়- আমি এই নীল ইশকুলে
অধ্যয়নে গিয়ে তবু ঘুমিয়ে পড়েছি কুয়াশায়...
কি তবে পাঠ্য প্রতিভা... আহা দিগন্তের সূত্র ভুলে
ওইপারে শতদল ফুটিয়াছে... ওইপারে যাই...
এই আমার প্রবাহ- দিনে দিনে বিভীষিত পাখি
প্রাতিস্বিকে ডানা মেলে দিই- আহা ডানার কাহিনী
লিখে রাখে গ্লেসিয়ার হাওয়া... হায়... লুকিয়ে থাকি
আর ওই প্রান্তরের ইশকুলে যাই প্রতিদিনই...
এইসূত্রে সর্বনাশ ঘটে যায় সংহিতা-সাধনে
অর্থাৎ যা কিছু সংগ্রহ সিদ্ধি- ফেলেছি হারিয়ে;
তবু এই সাঁকো ভেঙে নদী পার ভালোবাসি বলে
সংবেদনা রেখে যাই যাবতীয় বেদনাকে নিয়ে...
এসব অব্যয় কথা- সমুদ্রে যে শিশির জমাই
পৌষের প্রথম স্মৃতি পুড়ে গেছে ধুধু পূর্ণিমায়...
মাঘ
আমাকে নিয়েই গল্প বলি এই শীতল পূর্ণিতে
আমি তবু নৈর্ব্যক্তিক হতে গিয়ে হয়েছি বিলীন
এই পরমেষু প্রব্রাজনে- অস্মিতার পূরবীতে
ভেসে ভেসে যাই... ভাসমান... হৃদি-রাগে ভায়োলিন...
তবু এই তূষ্ণীভাব- অর্থীমগ্ন মৌল স্বরূপন
লিখে যাই আত্মস্মৃতি... শ্শানের মুর্মুর প্রতিভা...
পরিদৃশ্যে দারুদিন- দুলে ওঠে দুঃখ... ঝাউবন
আর ওই বনের গভীরে সংসার পেতেছি যদিবা-
তবে আমার কথাই আজ বলা যায় বিভূষণে!
অতএব আমি ওই গুপ্ত অমরাকে ভালোবাসি
এই পরমেষু প্রব্রাজনে... আর মুগ্ধ বিস্মরণে
ভেসে ভেসে যাই... ভাসমান... হৃদি-রাগ অভিলাসী...
আমি তবু অদ্বিতীয়... অধিরূঢ়... শোভন একাকী
মাঘ-নিশিথের কোকিল... হে আমার নিয়তি-পাখি...
ফাগুন
ধূম লেগেছে বিদ্রুমে আজ- হৃৎকমলের শীষে
মৃত্যু লিখি মহোৎসবে... আহা মুগ্ধ শরণ সাধ!
বরেষু প্রিয় বীরণ বনে- যাই মনীষায় মিশে
আহা অশ্রু এবঙ সমুদ্দুরে উধাও বিসম্বাদ...
বৃষলের এই ব্যাকুলতা... প্রার্থনা আর প্রপাত
শেষ মনোহর সুরধ্বনি- ভৈঁরো রোদন ভুল...
অতএব এই সামান্য দিন- অসামান্য রাত
প্রস্ফূটিত শূন্যতা গো! আমার ঘূর্ণি-হাওয়া-ফুল...
তবে কি আমি সৌরভে যাই প্রতিপৃথিবীর খোঁজে
বীরণ বনে মুগ্ধ শরণ- অলৌকিক এই আশা...
আমাকে তবু আমার মতোন একটি আমি বোঝে
সেই আমি তুই সমার্থক ও অমোঘ ভালোবাসা...
ফিলোমিলা... পাখি তুই, আর আমি মহৎ শিকারি
ফাল্গুনের এই সাধ আপাতত আকাশ-সঞ্চারি...
চৈত্র
আমার যা কিছু গান- পাখি তার প্রথম গায়ক
এবঙ যা কিছু দুঃখ- নদীদের সব তো বলিনি...
আমি যে কতোটা আমি... আমি তার সামান্য স্মারক
তবু এই অর্ঘ্য-মন্তু-প্রাণ আজ জন্ম-যজ্ঞে ঋণী...
আর ওই মালবিকা... প্রতিসূত্রে পুনর্জন্মদায়ী
তাকে যদি তৃষ্ণা বলি- তবু তাকে ফের বলি জল...
তাকে তবু মুহূর্ত বলেও বলি তাকে অনপায়ী-
তাকে বলি দলছুট... তবু অগোচরে একা দল...
আর ওই মেঘশিল্প... মনীষার স্নেহজ ব্যসন
আমাকে দেখায় দিব্য- দূরতম দ্রাক্ষা-পুঞ্জ-বাড়ি
ওই আমার তীর্থ-প্রদেশ... আহা পূর্ণ চন্দ্রায়ন;
আ মরি নৈবেদ্য পোড়ে প্রধুমিত প্রতিমার শাড়ি...
আমার যা কিছু কথা- কবিতায় কোন মর্মে বলি
চৈত্রের জোছনা এলে- দিও মোরে গূঢ় অন্তর্জলি...