Friday, October 9, 2009

তুই যেন জল... লাবণ্য মর্মর মিথ... মেঘ-মন্থর
তবু হৃদি-রাগে প্রবাহিত অতিথি বৃশ্চিক
অভাবিত অর্থী-মগ্ন পুষ্পপ্রিয় পাখি... একদিন
ঐচ্ছিক ডানায় তবে কি কি নিয়ে যাবি?

আমার সামান্য ছায়া... তবু অসামান্য নির্জনতা
বিপ্রলব্ধ ফিনিক্সের গান
আর
মুমূর্ষু-বাসনা...
তুই যদি পাখি তবে কী লিখিবো
ডানার সরণি থেকে প্রয়াত পালকের এপিটাফ...

তুই যেন জনান্তিক... তুই জল... লীথি
লরেল পাতার গান
আমিও গেয়েছি- তবু
আপাত বৃশ্চিক তুই- রূপায়ণে নীলপ্রান্ত... প্রজাপতি

ভূমিকা : ১

বাংলাদেশের তরুণ লেখকের মননের দিগন্ত প্রসারিত করা তরুণ লেখক প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। অপোকৃত কম বয়সী তরুণ লেখকের বই বাংলা একাডেমীর প্রচলিত মানদণ্ডে প্রায়শ গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় না। তাছাড়া আমাদের আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তরুণ লেখকের প্রতিভা বিকাশের অনুকূল পরিবেশের অভাব লক্ষণীয়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে একজন তরুণ লেখকের আত্মপ্রকাশের সুযোগ এখনও সীমিত। স্বভাবজাত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও প্রকাশনার সুযোগের অভাবে আমাদের দেশের অনেক তরুণ লেখককে নানা রকম লক্ষরহিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায়। তরুণ লেখক প্রকল্পে এই তরুণদেরকে সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত করার সুযোগ প্রদানের মধ্য দিয়ে কর্মমুখী জীবনের দিকে উৎসাহিত করা হয়। তাই তরুণ সাহিত্যিকদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ একটি মান উন্নয়নমূলক ইতিবাচক পদপে।
তরুণ কবি টোকন ঠাকুরের অন্তরনগর ট্রেন ও অন্যান্য শব্দাবলী শীর্ষক কাব্যগ্রন্থটি পাঠকসমাজে সমাদৃত হবে এই আমাদের বিশ্বাস।

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
মহাপরিচালক
বাংলা একাডেমী, ঢাকা

ভূমিকা : ২

তরুণ লেখক প্রকল্প সে-সব তরুণের জন্য যারা সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতির স্বার রেখেছেন। প্রকল্পে কর্মরত অবস্থায় ছয মাসের মেয়াদের মধ্যে এদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা, সাহিত্যের আঙ্গিক, কলাকৌশল সম্পর্কে সচেতনতা, দেশীয় সাহিত্যের মূলধারার সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের যোগাযোগ, নবীন ও প্রবীণ সাহিত্যকর্মীর অভিজ্ঞতা বিনিময়, পড়ার ও লেখার আগ্রহ সঞ্চারের মাধ্যমে তাদের প্রতিভার লালন ও বিকাশের পথ সুগম করা- এ হচ্ছে ল্য। মুদ্রণ প্রযুক্তি সম্পর্কেও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাহিত্যচর্চাকে শৌখিনতার স্তর থেকে প্রফেশনাল পর্যায়ে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হয়। এককথায়, সিরিয়াস লেখক হয়ে ওঠার ব্যাপারে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখার প্রয়াস এই তরুণ লেখক প্রকল্প।
প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক তরুণ লেখকের একটি করে বই প্রকাশ করা হয় বাংলা একাডেমী থেকে। তরুণ কবি টোকন ঠাকুরের অন্তরনগর ট্রেন ও অন্যান্য শব্দাবলী শীর্ষক কাব্যগ্রন্থটি সেই নীতিরই বাস্তবায়ন।

আসাদ চৌধুরী
প্রকল্প পরিচালক
তরুণ লেখক প্রকল্প, বাংলা একাডেমী, ঢাকা

Wednesday, October 7, 2009

ক. আরো কিছু গান অথবা প্রার্থনা

আরো কিছু গান অথবা প্রার্থনা
প্রথমে ব্যাকুল ঠাকুরের গানে    অতি ছোটো প্রাণে
আরো কিছু সঙ্গীত        অবিভক্ত কথা
                  আর
পূর্ণদৈর্ঘ্য ব্যাকুলতা        বিরহ রচনা
                 তবু
মাঝে মাঝে ভালোবাসি    দীর্ঘ নিরবতা


ক.  মাতৃমঙ্গলের জলপ্রপাত...

সেই থেকে শুরু হলো স্নিগ্ধতা দিয়ে মানে সেইসব দিন আর
গূঢ় কিছু গন্ধে গন্ধে আদিগন্ত গ্রামদেশে সেইসব সকরুণ গল্পগুলি
এখনো ঘুমিয়ে গেলে যেনো জেগে থাকে
আয়ুষ্মতী জননীর চোখ- সেই চোখে সপ্তর্ষি-পুরাণ
আর
আমাদের মা কি তবে এখনো জননী?

    জননী গো- জিষ্ণুতে আজ আমিও জেগে জেগে
     তোমাকে আর আমায় নিয়ে রয়েছি উদ্বেগে!


আমি সেই জননীর হিরুময়ী অহঙ্কার চূর্ণ করে এসেছি
তবু আমাদের মা সংগোপন ভালোবাসেন- আর কী আশ্চর্য
গোপনের সব গ্রাম দূরদ্বীপে জলমগ্ন হলো- আর
জন্মজলে তৃষ্ণাতুর তবু আমি অজ্ঞাত বাউল... আহা
সেই আমার প্রথম প্রণিধান- আমিও কি প্রমূর্ত পুরুষ?

    বোনগুলো সব ক্যামন যেনো- বোনের কি করে
      জননী আর ভগ্নি দেখি একই শাড়ি পড়ে!


অতএব মাতৃমঙ্গলের ফাঁকে এই বলা যায় (ব্যষ্টিবাসে বলি ভগ্নিগণ
তোমাদের হরিতাদ্র বন ছুঁয়ে একদিন জলপাই গন্ধ এনেছিলাম)



খ. বসতি বলে যে বিস্ময় ছিলো বিবিধ নন্দনে...
চলো যাই জলপাই বনে বা- অথবা অতিদূর গগণে
পায়ে মাখি কচি ধানতে আর ওড়াই ঘুড়ি মানে কৈশোরে উড়ি
তাই প্রমাণিত... অধিক প্রামাণ্য জানি পাখি- তবে
সেইসব পাখিদের সাথে পুনর্বার দেখা হলে কি কথা কহিবো?
আজ এতোদিন পরে তবে মনে করি প্রাগুক্ত পঙতি- আহা


        আমার সোনার চান পাখি
        তোরে কোথায় রাখি
            পাখি রে...


আমি আর একবার পাখি হতে এই প্রাণ উড়িয়ে দিলাম
মধুপুরের মাঠে- গাঁ-গঞ্জের প্রতিবেশে কোনো মধুপুর এখনো কি
                মায়াবী মৌন গ্রাম?
রাই সরিষার বনে লুপ্ত হলুদ সবুজ ঘ্রাণ- আর কীনা মাঠের কিনারে নদী-
আমি সেই নদীজলে গাঙশালিকের গল্প কুড়িয়ে রাখি!


গ. পুনর্বার জননী ও ভগ্নির কথা বলি...
একদিন ভোরবেলা হেঁটে হেঁটে জোড়াদহে যাবো- নীলকুটি ধরে... আর
আমি ঠিকই চিনে নেবো আমার জন্মকাতর ধ্বনি- ও জননী
এইজন্ম আত্মনাশ ভালোবাসে বলে একদিন জলপাই গন্ধ থেকে
একদিন শালদুধ এনেছিলো আহা কী যে সুন্দর বিনাশী পাতক-
কুসুমিত কুমারীর ফণা ভেঙে পতনের তীব্র বিষ ঢেলে দেয়...
        তবে আজ এই চৈত্রের উৎসবে
        অথবা এ বনে বনে পাতাদের প্রস্থান সঙ্গীতে
পুনর্বার মুগ্ধতায় ক্যানো ভেসে যাবে বিভীষিত জলে
ও আমার চর্যার কবিতা-বোন
        স্মৃতিথি-আত্মজ
অধিপ্রাণে গেয়ে যাই অন্য এক মনীষার গীতি...



ঘ. আরো কিছু কথা- হয়তো অযথা... তবু তিতিক্ষা-প্রলাপ...
এই যে আমি রেখেছি চাঁদের প্রথায় পুড়ে যাওয়া শব্দাবলী
আর মিশ্র মিশ্র বাক্যচর্চার বিবিধ ল.সা.গু... একদিন
গোকুল নগরে সন্ধ্যা এসেছিলো শ্মশান-সন্ন্যাসে
আর আমাদের পোড়া পোড়া ইতিহাস ওড়ে হাওয়ায়-
        আহা ভুল চন্দনের গন্ধে একদিন
নদীজলে অনৈতিহাসিক ঢেউ ভালোবেসে হারিয়ে গিয়েছি...

ঙ. পুনশ্চ থাকাতে সুবিধা এই- আরো কিছু কথা বলা যায়...

পুনশ্চ আমারো প্রিয়- আমি খুব রূপকথা ভালোবাসি
        রাজা ছিলো
        রাণী ছিলো
        পশু আর
        প্রাণী ছিলো
        আরো ছিল কি?
        আহা খবর এনেছি


ঠাকুরের দেশ ছিলো না    কখনো শেষ ছিলো না
        প্রাণ ছিলো না প্রাণে-
        মুর্খ... সসম্মানে
        হায়!


এইসব গল্পগুলি আরো কিছু রূপকথা হয়ে যায়...



স্কেচ: ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬
বউ অপ্রকাশিত এই পাণ্ডুলিপি একদিন মুদ্রিত হবে আমার পাঁজরে

অলৌকিক সুন্দরের পাদদেশে। আপেল গড়িয়ে পড়ে। সোনার গোলক। পাখিসব যে পালক ঝরিয়ে দেয়- আহা কবে কেউ শুনেছে কি পালক ঝরার শব্দ কী রকম পাখোয়াজ হয়ে যায়। অধিকন্তু জল-কল্লোল। কাব্যমতে বলা যায় যেনো সেই মার্গীয় মূর্ছনা... পুষ্প-কোরকের অনাদি বিস্ময়ে কী কেউ তোলে দিকে দিকে সান্দ্রময় মৌনতায়। তবে দূর পাহাড়ের নির্জনতা কি আমাদের পেছনে লেগেছে?

জানি এইসব শীতকলা- কুয়াশারহস্যের দিনে আমি তবু অপারগতায় তোমাকে যা বলিনি- সেই আমার অনুচ্চারিত... মেটাফিজিক্যাল প্রণতি... অপ্রকাশিত... হৃদি-রাগ পাণ্ডুলিপি... বাঙলা কবিতায় অনন্যের সম্ভাবতায় নন্দনতত্ত্ব... আহা সেই আমার মহান ইথিকস্- সপ্রতিভ সৌন্দর্যের না বলা এপিক- যাহা মরে গ্যাছে আমার ভিতরে- যথারীতি আমিও মরেছি অজস্র... গভীর প্রাতিস্বিকে- অর্থাৎ আমার প্রকৃত গান তুমি কোনদিন শোন নাই... তবু আমাকেই কী ভীষণ গায়ক বলেছিলে... হায় আমাদের পদবীতে ভালোবাসা লেগে গিয়েছিলো...

তবে আজ যা কীনা মৌলিক- আমি আর যে তুমি এই দৃশ্য রূপায়ন করে যাই তবু না বলা পারস্পরিক... সেইসব কথায় পুষ্প-কোরকের অনাদি বিস্ময়... অভাবিত শিল্পকলা...

আর এই প্রকাশিত দিনগুলি... তা তা থৈ সুন্দর দিন যাহা আসে নাই আমাদের পূর্ব জানালায়- তাই সুহৃদের ভাষ্য পাঠ করি আর জেনে যাই- অধিক সুন্দর তবে থাকে আগামীর পানপাত্রে... আর সেই পাত্র থেকে একফোঁটা মদিরাও পড়ে না অতীতে বা অধুনায় পড়ে না কখনো...



মধ্যাহ্ন কীর্তন: তিন
আমি সেই পাতাটিতে    প্রণীত এবঙ
পাতাপ্রবাহের পথে শুনি প্রিয় ঘুঘুদের গান...

পাতাটির আরো কথা    পাখিরাই জ্ঞাত
বোঁটায় বিয়োগচিহ্নে উড়ে যায় কোথাও... কোথায়
ছায়ায় বসতি রেখে আরো কিছু মেঘ-নীলিমায়...

আমি সেই পাতাটিতে    প্রণীত এখন
পাতাপ্রবাহের পথে শুনি প্রিয় ঘুঘুদের গান

দুপুরের দিন ভেঙে        ঘুঘুদের গান
আমার পতন থেকে    যা কিছু মর্মর
অরন্তুদ- আর এসেনিন উঁকি মারে জানলায়...



সংশয়
স্পাইরাল হয়ে ফিরে আসি
গৃহে গৃহে;
পথে দেখা প্রিয় পাখিদের সঙ্গে
মেঘে ও মৃত্তিকায় আরও কতো স্মৃতি...

যতোদূর যাওয়া যায়
যেনো তারও অধিক গিয়েছি আমি-
তবু ফের বসে আছি
দাদীমার ঘরে-
বয়সিনী দাদীমা তো শুয়েই থাকেন...

সামান্য কিশোরী তুমি! ঘুরে ঘুরে
দাদীমা হয়েছো!!
কি তবে গ্রহণীয় আজ
        গৃহে গৃহে?

অসীমায় সীমাবদ্ধ যাহা... ম্যাজিক্যাল
ও ভাই স্পাইরাল
তবে কীনা
আমার দাদীমা কখনো কিশোরী ছিল না...
যেনো আমি কোনদিন কোথাও যাইনি...



বনলতা ইশকুল
যদি আজ সেইসব পালকের কথা বলি
আমিও কি ভেসে যাবো উত্তরের আর্দ্র হাওয়ায় হাওয়ায়...

বলো তবু চক্ষু দিয়ে বলো- হাওয়ায় হাওয়ায়
ভেসে যাওয়া ভালো ছিলো যদি
        তবে ক্যানো ডানা ভেঙে ছিলে... আর
এইসব গুহ্য গল্পগুলি ছিঁড়ে দিলে অবেলায়-
আরো গুহ্য কোনদিন
এইসব গল্পের বাইরে কোনো জীবন ছিলো না
            অধরা ও বালিহাঁস-
যদি সেই পালকের গল্প বলি এই নিভৃত নন্দনে
যদি সেই ডানার স্মরণে আজ বলে যায়
        অরন্তুদ স্মৃতিগুলো
আমিও কি ভেসে যাবো উত্তরের আর্দ্র হাওয়ায়...

পায়ের প্রতিভা তাকে এই পথে নিয়ে গেছে
বনলতা ইশকুলে... দূরে ও সুদূরে
        আজও পথে পড়ে থাকে ধুলো
আহা আমাদের মাধ্যমিক দিনলিপি বনলতা ইশকুলে...

এখন শিক আমি... বাঙলা কবিতা পড়াই- আর অগোচরে
প্রতিদিন প্রিয় পথ থেকে একমুঠো ধুলো রাখি তুলে...



চিহ্নিত কারক
সম্প্রদান করি- এই অস্থি, হাড়ের ঝিলিক
নিশিচন্দ্রে আজ জ্বেলেছি আগুন!

এই উষ্ণতা... অঙ্গিরা রাখি
        পৃথিবীর শীতের পাঁজরে...

এবঙ প্রহরা করি... অন্যান্য কুহকে
যাবতীয় নিদ্রাকুল নিরাপদে থাক!

আর অবশিষ্ট দিকে- তোমাদের তূষ্ণীম্ভাবে
আমার কঙ্কাল ঘষে
    মূর্ছনা পাঠাতে পারি-
তোমরা কি ভায়োলিন ভালোবাসো?

সম্প্রদানে... সামান্য কারক
তাকে আর চিহ্নিত কোরো না...



জলাতঙ্ক
শিশিরে সমুদ্র ছিলো এই ভেবে ভ্রমণবিমুখ
এতোগুলো ভোরবেলা হারিয়ে ফেলেছি-
আসলে কি সত্যি ছিলো এরকম বাণী

বাঁশপাতা ভেঙে সেই শৈশবের মনস্ক বৃদ্ধটি
করতল ছুঁয়ে যে দ্বিধা জড়িয়ে দিয়েছিলে:
জল তোর আজীবন বিসদৃশে যাবে

জলের প্রকৃতি ছিলো ভেজা ভেজা হিমায়িত স্মৃতি
এরকম রীতি জেনে অগোচর অভিজ্ঞান থেকে বলি:
আমিই যে জলেই স্নাতক... জল পাঠ্য করি

আর এই নদীপাড়ে কাশবন প্রভাষণা করে- দৃশ্যান্তরে
শ্মশানের ইতিহাস লিখে রাখি- এই কথা
একদিন সন্ধ্যাকে বলেছি

আমাদের সংসারের মতো এই সন্ধ্যা- বৃষ্টিগত
মহাকাল- আহা অনপায়ী নদী- ফোঁটা ফোঁটা জল
আর এই জলে যুক্তপ্রাণ ভেসে ভেসে যায়...


জার্নি বাই এ ট্রেন
বলা যায় সমস্ত শীতের জাগর জোছনা আর উদাসীন অহঙ্কার নিয়ে- সাতকানিয়ায় নিমজ্জিত মধ্যবিত্ত নিরবতা ভেঙেই হয়তো প্রথম শিস দিয়ে এলো আমাদের দিকে... আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি এরকম ঝিকঝিক শব্দ কেনো হয়... বুকের ভেতর নদী নেই তবু কী রকম জল ঘুরে ঘুরে ওঠে আর পাঁজরেই প্রতিষ্ঠিত হয় হাড়ের স্লিপার... আহা অনেক অনেক দূরে ওই বিন্দুপুরে ঘুমিয়েছে পৃথিবীর অনন্ত মহিমা... পুরনো রেললাইন...

আমরা এখন, এইটুকু বুঝি- মেঘের সঙ্গে মানুষের মৌলিক পার্থক্য... এবঙ আমরা কীরকম পরিপ্রেতি ভালোবাসি- অথবা যে আমি দৃশ্যের আড়ালে ওই স্বপ্নপত্রে লিখেছি আমার অধিপ্রাণ প্রাত্যহিকী... আর এই মুহূর্তে ছোট্ট যে পাখিটি উড়ে গ্যালো হরিতাশ্রয়ী বনের গভীরে- কীরকম বৈসাদৃশ্যে আমরা ডানার সাধ ম্রিয়মুখে বসে থাকে হৃদয়েশ্বরী গৃহের উঠোনে...

আরও বলা যায়, মৃত পাতাগুলি উড়ে উড়ে যে কাহিনী মুদ্রিত করে শাদা পৃষ্ঠার হাওয়ায়- তবু এই ধ্বনিচিত্র রূপায়িত হতে হতে হয়তো বা জানা যাবে ওই ঘুড়ির কঙ্কাল কবে কোন বালকের স্মৃতি নিয়ে উড়ে গেছে জন্মদিনের শুভেচ্ছায়- আহা মেঘষ্মতী বালিকার দিকে- দূরদেশে... প্রতিপৃথিবীর গল্প জমেছে গভীর...

এইসব মুহূর্তের প্রতিলিপি সংগ্রহ করি আর এই ধাবমান মগ্নতায় বসে বসে থাকি আর আমাকেই স্বরচনা করি- আহা অনেক অনেক দূরে ওই বিন্দুপুরে ঘুমিয়েছে পৃথিবীর সুষমা সকল- পুরনো রেললাইন... আমি রেলযাত্রী... একা তবে নিজের সঙ্গে ওই প্রান্তরের পার্থক্য কোথায়... কতো কতোদিন কেন ওই পাখিগুলি আমাকে তাদের পালক কুড়োতে বলেছিলো...



প্রবাদিত মোমের প্রণতি
আর ওই কাঞ্চন-সন্ধ্যার কাছে বলি- বিভীষিত
জলের কাহিনী... আর ওই রূপায়িত ভোরের মন্দির...
সুষমার শূন্য দেশ, সেই দেশে শাদা... সন্তগ্রস্থ
চন্দ্রসভ্যতা গড়ি আর ভেসে যাই পাতকী প্লাবণে...

তবু এইপারে জেগেছিলো আনত ভিক্ষুক... ঋদ্ধ মহিমায়
সপ্তর্ষি প্রজ্ঞান করি আমি প্রবালের ভাই
সমুদ্রবাসনা রাখি চৈত্রের যাত্রায়...

আহা মুগ্ধ বিস্মরণ... আর এই অনৃত ভ্রমণ-
আমি তবে কোনদিন কোথাও যাইনি... বিভীষিত
জলের কাহিনী আর প্রাপ্ত যা প্রজ্ঞান
একে একে তীর্থে যায় যাবতীয় দৃশ্যাবলী
সেইখানে আমি কেউ নই- যারা কিছু ডেকেছিলো কোনদিন
আমার কি নাম ছিলো... হায় বিস্মরণ
দ্ব্যর্থ দিন প্রধূমিত, দ্ব্যর্থ তবু প্রলুব্ধ রজনী...

আর ওই কান্তজী-প্রত্নের কাছে বলি- মর্মরিত
আমার জীবনী... আর ওই প্রবাদিত মোমের প্রণতি...
ইহা যদি পুষ্প... তবু প্লাবণের ঢেউ ভালোবাসে...

আর ওই প্রব্রজ্যা-প্রান্তের কাছে বলি- লুক্কায়িত
সূচনা আমার... তবু সমাপ্তির সুদূরে বসতি...



হৃদি-রাগে ভায়োলিন শুনি
আর তবে সেই ফাইং বার্ডের কথা মনে পড়ে? অমল ধবল পূর্ণিমায় পৃথিবীর লোনলি প্রান্তরে- তুমি সেই ফিনিক্সের গান আর শুনবে না কখনো? অতীন্দ্রিয় অভিলাসে তীব্র সেই ডানা দেখে দিয়েছিলে প্রদগ্ধ দ্যোতনা- ও প্রিয় পাবক... ভূপৃষ্ঠের কোন পাড়ে তবে তার প্রিয় মুখ অবমত? আজ তবে সেই ফাইং বার্ডের কথা মনে পড়ে- অমল ধবল পূর্ণিমায় পৃথিবীর লোনলি প্রান্তরে?


শুধু এই অভিজ্ঞান জ্বলে ওঠে সন্ধ্যার পূরবী-পাড়ায়... অবিমিশ্র অন্ধকার বনে দূর দৃশ্যাবলী... ঝিঙেফুল ফোটে- তুমি তবু তার কিছুই জানো না আজ এই একুশ শতকে- কোন ওই জোনাকিরা জন্মমাত্র জ্বলিতেছে আর ফাইং বার্ডের গান- ডানার কাহিনী লিখিতেছে?


তুমি... তুমি তবু আজ কিছুই শোন না কোথায় হৃদি-রাগে ভায়োলিন ভাসিতেছে...


জন্মোৎসব
ঘুমিয়ে পড়েছো; পাতকের প্রিয় পাখি
ডানা খুলে যায় মর্মর অবসাদে,
প্রাক-পৃথিবীর ইতিহাস ছিঁড়ে ফেলে
আমরা চলেছি চিতার মতোন চাঁদে...


প্রবাহ জানে না- প্রতিপ্রবাহের গান
গার্হস্থ্য দিনে আমরা পেয়েছি অমা-
প্রতিভা নদীর আতুর-শ্মশানে এসে
ডানা ভেঙে ফেলে উড্ডিন রাখি জমা...


সে কোন কাহিনী- পথে পথে ধূসরিত
সেই পথে যাই মগ্ন মর্মলোকে,
ঘরোয়া রাতের গল্পগুলিকে ছুঁয়ে
প্রতিবিবাহের পদ্ম ফোটাবো চোখে...


ছোটো শ্যামা পাখি- পাবকের প্রতিস্বাদে
আমরা চলেছি চিতার মতোন চাঁদে...


খাম
চিঠি লিখি চোখে চোখে আনত অক্ষরে
চিঠি লিখি নিস্তরঙ্গ মনীষা মর্মরে-
চিঠি লিখি... লিখি চিঠি... ভাষা নিরবতা
চিঠি লিখি... লিখি অশ্রু... লিখি ব্যাকুলতা...


চিঠি লিখি... শীতরাত্রি... কুয়াশাকালীন
চিঠি লিখি... লিখি ব্যথা... লিখি শব্দহীন-
চিঠি লিখি... লিখি চিতা... লিখি ভালোবাসা
চিঠি লিখি... সবকথা... নিরবতা-ভাষা...


চিঠি লিখি... ডাকঘরে... তনুশূন্যতায়
চিঠি লিখি... লিখি স্মৃতি... বিস্মৃতিরা খায়
চিঠি লিখি... লিখি চিঠি পাতকী পয়ার
চিঠি লিখি... লিখি চিঠি... জোছনা-জোয়ার...


চিঠি লিখি... লিখি স্বপ্ন... হয়নি যা বলা
চিঠি লিখি... লিখি মৃত্যু... পুণ্য শিল্পকলা...


অভিমান
অস্থি থেকে উঠে এলি তুই
মর্মের সন্তান
আমাকে কি ছেড়ে যাবি না!?


কি এমন পাপে এই পাথরে আগুন!?
কি এমন অন্যায়ে আমিই মহান!?


দুঃখদের সব গ্রাম
আমাকে চিনিয়ে দিলি!
দহনের সব নদী
আমাকে ভাসিয়ে নিলি!!


তবু তুই ধুধুজল
অস্থি থেকে উঠে এলি
মর্মের সন্তান
আমাকে কি ছেড়ে যাবি না!?

Monday, October 5, 2009

খ. শত সপ্তাহের পদাবলী

সোমবার
কাব্যকলা ক্যামন সুস্বাদু- এই নিয়ে অবারিত
আলো ঘনীভূত হলো যোগিনীপাড়ার মাঠে!
দুদশ বাড়ির ছোটরা সবাই বিশেষ তাড়িত-
এই স্মিতে কলা বিক্রি করি মেঘশিমুলের হাটে!


আজ বেশ সোমবার যেনো শাদা শাদা প্যাপিরাস
তাই অন্তরঙ্গ রোদ-গন্ধে ভাসে বিকল্প মৈথুন!
কোথায় কবিতা আর কাব্যময়ী গণিকার শ্বাস
আমি কি খাবো ও সুব্রত- সোমরস না তোর ধুন?


সোম কি মাহেদ্র সুহৃদ না কোনো মনীষার দেশ
কেন এই অধিরূঢ় অর্থহীন জলের আল্পনা
সোমবার কেন্দ্রে রেখে?
পৃথিবীতে বহু সোমবার ছিলো- আরো যায় শোনা
কোনোদিন সোমবার আসে নাই- অথবা বিশেষ
সপ্তাহান্তে সোম... শূন্য বা একাকী...
বংশলুপ্ত করে দেয় অবশিষ্ট ডোডো পাখি


মঙ্গলবার
মঙ্গলবার মাত্রই আমার জন্মদিনের রোদে
অসামান্য প্রাতকল্প: কিছু প্রিয় পাখি উড়ে যায়
সেই শারদ প্রান্তরে- দৃশ্যত রয়েছে কী প্রবোধে
একটি মাছির কথা মনে পড়ে- ডানার দোহাই!


স্পষ্ট হলো ডানা ভালোবাসি! ডানাচর্চা কতদূর
হয়ে গ্যালো পৃথিবীতে... তবু অসমাপ্ত পর্যটন
ও ফরিদ চলো যাই ফলের হৃদয়-সমুদ্দুর
আর আমাদের পাঠ্য করে নিই প্রধুমিত যে ভ্রমণ!


আজ মঙ্গলের দিন- মঙ্গলবার নদীতীর দেশে
আমি কী রেখে এসেছি কোনো কালো যুবতীর জ্বরে!
অনুব্রজা সেই জ্বর-
আরো কিছু আর্দ্রধ্বনি কবিতায় গেঁথে গেঁথে শেষে
মঙ্গলে জন্মের কথা ভেবে আকস্মিক মনে পড়ে
মনে পড়ে কী অদ্ভুত... হায়
জন্মেই নারীস্বাদে বিস্মিত- এখন বিস্মৃতপ্রায়...


বুধবার
আমার পিঠে যে জন্মেছে সংসারে সেইদিন বুধ-
বার ছিলো কী কারণে- এই সত্য গভীর অচেনা।
তবু আজ এতোদিন পর আশ্চর্য আর অদ্ভুত
এসে বলে গ্যালো- অনেক বুঝেও তুমি বুঝবে না!


আমাদের মধুপুরে আমি আর অ্যাবস্টাক্ট বোন
নদীবর্তী ধানীমাঠে উড়িয়েছি আমাদের ছায়া!
এইসব শব্দপাতে অদৃশ্যত রয়েছে যে টোন
বেদনা আমার বোন- যেমন ফেলে আসার মায়া...


বুধবারে এইভাবে বৃষ্টিনামে আমাদের ঘরে-
বিশেষণে চলে যায় বোন... হায় অ্যাবস্ট্রাক্টশন...
কি বুঝি বুঝি না কিছু-
বোনের বিভ্রম প্রাণে বোধি-শিলা কখনো কি ঝরে
কী আশ্চর্য কী অদ্ভুত! ও জহির এই বিলোচন
হয়তবা কিছু নয়- তবে
প্রতিদিন বুধবার হয়ে গেলে কী রকম হবে...


বৃহস্পতিবার
অসামান্য বৃহস্পতিকে কী সামান্য একটি দিন
বলা যায়- আমাদের ছোটো মুখে প্রমিতি অনেক!
তবু ভাবি, আজ এই দিন সপ্রতিভ সমীচীন
অস্পৃশ্য দরোজা ভেঙে আসে শূদ্রচ্ছিন্ন অভিষেক!


বৃহস্পতিবার- কারো কারো করতলে মনোনীত!
অব্যয় আকাশ ভূর্জপত্র ভেবে করি বিরচনঃ
এই ব্রাত্য প্রাত্যহিকী- প্রাতিস্বিকে আমরা প্রাকৃত
অভিজ্ঞানে, স্বপ্নে- অনির্বচনীয় কমলাপ্রবণ...


কমলার রূপকথা সারা হলে অন্য কথা বলি-
একবার খুব বৃষ্টি হয়ে নেমেছিলো বৃহস্পতি;
বৃষ্টির অর্থ বিধি-
মেঘদেশ হতে পারে অন্বর্থ আমার অন্তর্জলি!
অসামান্য এইসব অন্তর্বর্তী ঐচ্ছিক প্রগতি
নিসর্গে প্রদান সারাৎসারে-
আমাদের ছোটোমুখ বড়ো হয় বৃহস্পতিবার...


শুক্রবার
উপাখ্যান প্রস্তুত হয়েছে! এইবার ঘরে ঘরে
মধ্যাহ্ন কীর্তন হবে! দিন ধার্য করি শুক্রবার!
আর শুকনো পাতায় প্রচারণা পৌঁছুবে প্রান্তরে-
অসামান্য শিশুসূচি- নান্দীপাঠে জলের পাহাড়...


জল থই থই জলের পাহাড় ভাসে উপাখ্যান!
ও শাহেদ- সেই জুজু-পৌরুষ দৃশ্যত এক পাখি...
শুক্রবারে আজ আমাদের চোখের পাতায় গান
ডিমের ভিতরে আজন্মকাল তবে কি আর থাকি?


শিশুলীন হয়েছি যখন! আসন্ন পার্বণে আয়
আত্মনাশ করি একে একে! প্রগত প্লাবন... ঢেউ
ভেঙে যে নদী বিস্মৃত-
শুক্রবারে আমাদের দাবী- প্রাকৃতিক প্রার্থনায়
আকণ্ঠ অঙ্গার নিয়ে কালপূর্ণিমায়- কেউ কেউ
অবিমিশ্র শীতকুয়াশায়
শিশু তোরা থাক! মোরা ডোডোমির গল্প হয়ে যাই...


শনিবার
কবে সংসার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো শনিবার
তবু অশনি গ্যালো না- প্রবীণ পাড়ায় জাগে ধ্বনি!
তবু হায় যেমতি শৈশব কুয়াশাপ্রবণ- আর
সেই আমার সকাশে সাধু বান্ধব শ্রীযুক্ত শনি!


শনিবারে যাহা পাঠ্যবিষয়ক -প্রত্নপাঠ্যসূচি
ঘরের উঠোন- জনান্তিকে বা পাখিদের প্রান্তরে...
প্রপিতাগণের অসম আবহে আকণ্ঠ অরুচি-
বাস করি আজ ইউক্যালিপ্টাসের ঘরে!


পুনর্বার শনিকথা ছেড়ে দিই পাঠকের ঠোঁটে...
যেমতি জীবন দাশ আমাদের অধুনা পুরাণ!
কয়েক সপ্তাহ পর
এই ষষ্টক লিখছি- এই অর্থে অন্য শব্দ ফোটে
কবিতার ঢেউ ভেঙে শনিবারে- কোথাও যে বাজে অর্গান
যা ঝরাপাতাদের গ্রন্থনা...
আদিত্য রে- আমি ক্যানো তবে পাতা হতে পারবো না...


রবিবার
অধিরূঢ় এমন রোদ্দুর! কতো মেঘ জমে ওঠে!!
আজ পূর্ণদৈর্ঘ্য দিন! ক্রুশকল্প... ঘণ্টাধ্বনি- আর
বিসদৃশে কিঝু কথা... কথাগুলো নির্লিপ্ত... প্রস্ফূটে
তবু যা উদ্ভুত- অতিক্রান্ত অর্থে আসে রবিবার!


যেমন আমি- এলদোরাদোয় যাবো বলে একাকী
কাগজের নৌকা বানাই- অগোচরে দুজন চড়ি...
ও রূপম- আজ রোদ্দুরে ও দূরে যে রকম থাকি
পায়ের প্রতিভা নিয়ে অভিমান প্রযোজনা করি...


এইসব রবিবারে আরো কিছু কথা (ছিলো) থাকে!
ঠাকুরের গানে হৃদয় ব্যাকুল (হৃদয় কোথায়)
যতোদূর চোখ যায়-
শনৈঃ শনৈঃ আমাকেই রেখে যাই অনিকেত বাঁকে
শাদা শাদা বিস্মরণে অনুস্মৃত হয়েছি প্রজ্ঞায়
আহা স্মৃতিদিগ্ধ দৃশ্যাবলী...
রবিবারে মন্দ্রস্বরে ঘাস-মাটি-পাথরকে বলি...

গ. দ্বিজ জীবনের পদাবলী

বৈশাখ
কৈশোরক এই কুয়ো... ভিতরে প্রত্ন-ছায়া... ছোবল...
আর আমি জর্জরিত- মধ্যযাত্রা ভেঙে দাঁড়িয়েছি
এই ভুল চন্দনের বনে... আহা রেশমী-কল্লোল
ছুঁয়ে ঝরে বেলফুল... আমি তবু বিভীষায় গেছি...


আর এই ধূধূরেখা... লাল-দিগন্তের রৌদ্রস্নানে
আমি মরুপাখিদের পড়শি... পুনশ্চ ইকারুস...
তবু আমাদের ছোটো নদী ঘুমালো কী অভিমানে
ও আঁচল পাল নয়... আহা মুর্খ-তরুণ পুরুষ...


শুধু এই পাটল হাওয়া রেখে যায় পাঁজরে প্রবাহ
কী আরক্তিম আল্পনা- করতল মেলে রেখো তুমি...
তবু এই দেহের শ্রেষ্ঠতম শিল্প-আমার দাহ
দূরের দেশের শিরা- ও প্রবালিকা পুণ্য-মনোভূমি...


এইসব শিলাস্বপ্ন- সকরুণ আর্দ্রতা বিলাস
বোশেখে বিগ্রহ সেবা... মোঘ-মর্মে বিষণ্ন অধ্যাস...


জ্যৈষ্ঠ
রৌরবে শুভম যাত্রা- জড়িয়েছি বৃশ্চিকের জালে
তবু এই আত্মনাশ আমার অমৃতব্য মহিমা...
আমি তো কেবলি অশ্রু- তুমি থাকো প্রবালে প্রবালে
অন্যূন সংবেদে আজ রেখে যাই আমার অসীমা...


এই জন্ম তবে কোনো প্রাপণের কাহিনী জানে না
তবু অবমত... যেনো অবধূত... হায় ক্রুবাদুর-
ধূলিমাঠে মৃগয়ায়- স্বপ্ন দিয়ে শুধু স্বপ্ন কেনা
খুব প্রিয় ছিলো একদিন... আজ রৌরবে মুর্মুর...


তবু শোভাযাত্রা- সুন্দরের অলৌকিক লীলায়ন
রেখে যাই পৃথিবীর প্রথাবিনাশের দিনলিপি...
একে যদি অভিমান বলি- শুদ্ধনাম সস্নেহে পতন
তবু এই পতনেরে ভালোবাসিলাম ধিকি ধিকি...


গভীরে অনেক গান- মৌনতায় বাজে কী বিবাগে
জ্যৈষ্ঠের সামান্য দাহ... লিখি মৃত্যু... হৃদয়-নৈদাঘে...


আষাঢ়
আজ শুধু গুঁড়ি গুঁড়ি স্মৃতি... সমাহিত ধূসর সঙ্গীত
বিভাজিত করে বুদবুদ: তাই অশ্রুজল থেকে
এই পারদ এনেছি অন্ধতায়- অর্থাৎ অতীত


আর তাই জল দেখলেই এই স্বপ্ন মাছ হয়ে
যায় মগ্নস্রোতে- সেই সর্গে সন্তরণ ছাড়া এই
অতিক্রম্য অনাবাসে যেতে পারি কতোটা বিস্ময়ে?
অতএব, সমুদ্র ছাড়া আর কোনো মাতৃত্ব নেই...


তবু এই এ্যাকুরিয়ামের কালে... ক্রান্তি-সংশ্লেশন
আর সীমিত সংবেদে, মনে পড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি স্মৃতি...
তবু মাতৃত্বের গন্ধ... শিশুসাধ ও মৎস্যপ্রবণ...
হায় গৃহশিল্প... দ্ব্যর্থপাঠে আজ অবগাঢ়-গীতি...


পরাণে প্রাবৃষ্য দিন আরো ঊর্ধ্বে- দ্বগ্ধ ওফেলিয়া
আষাঢ়ষ্য দিবসের গান ওই যেতেছে বহিয়া...


শ্রাবণ
আরও স্মৃতির অংশ- অধিপ্রাণে গাইছে অঝোর
এই বিষণ্ন-পুরাণ আহা আমৃত্যু বৃশ্চিকা-প্রিয়...
আর আমি জলদাস... শুভেচ্ছায় অসামান্য ঘোর
ওই লীথি পাড়ে-লুব্ধ... তুমি মোরে ভাসাইয়া দিও...


তবু এই তমোহর, তরুণাভ দিন- সমারূঢ়
ছোটে জীবনের গান... প্রপতনে বিমুগ্ধ-পীড়ন
আমি প্রার্থনা করেছি- অতএব নির্বেদে নির্ব্যূঢ়
এই আত্মনাশ আমার মহত্ব... গুহ্য বিধূবন...


আমি তবু লিখি ওই জলের কাহিনী- জলদাস
কী সাধে বিন্যাস করি আজ আর্দ্র-কোমল বাসনা
তবু মহত্বের দিকে যাই যেনো শিশুবালিহাঁস...
এতো যে জলের গল্প- জল তার কিছুই জানো না


আরও ঘুমিয়ে গেছে- ঘুমোবে না দগ্ধ ব্যাকুলতা...


ভাদ্র
প্রকাশ্যে লুকিয়ে থাকি- আর উত্তমপুরুষে আমি
মাঝে মাঝে কাউকে পাইনি... জীবনের পাশাপাশি
মৃত তবে এই মহার্ঘ-বাসনা, কোনো শিরোনামেই
এঁকে দিতে পারি না তো... শুধু অনুভব রাশি রাশি...


তবে কি ঐচ্ছিক এই শারদের সাতাশ পার্বণ
হঠাৎ থমকে দাঁড়াই- কী দারুণ পায়ের প্রতিভা...
তবু এই অচেনা দূরের দেশে আমার মতোন
আর কেউ কোনোদিন আসে নাই একাকী যদিবা-


তবে আমি কি এসেছি আজ? আগমন-অভিনয়
যদি বলি... আরো অভিনয় করি উত্তমপুরুষ...
এতোদিন পর... আহা গ্রীনরুম- অন্ধকারময়
দৃশ্যে আমি তবু দৃশ্যময়... প্রতিযেসাসের ক্রুশে...


এইবার অশ্রু দিয়ে লিখে দাও বিস্তীর্ণ এলিজি
ভাদরে মূর্ছনা ছিলো কবিনামা চৈতন্যের ঝিঁ ঝিঁ...


আশ্বিন
একদিন শরতের ভোরে একফালি চাঁদের অত্যাচারে হরিতালী ভেসে যায়
অমৃতস্য বিধুরতা- বিন্দু বিন্দু অনুস্মৃতি করি
আমি তো ছিলাম ওই গোপনেষু প্রত্নবীজে... ধ্যানে
তবে এই রূপায়ন... অবিমৃষ্য মাতাল মর্মরি
আমাকে উড়িয়ে নিলো শিলিভূত স্বপ্ন-অভিজ্ঞানে...


প্রসঙ্গত মনে পড়ে মেঘশিমুলের গল্পগুলি
আমাকে উড়িয়ে নিলো অতিদূর শাদা-সহোদর!
প্রতিবিশ্বে করি বাস- আর ওই তাসের গোধূলি
ভালোবাসি বলে বিলোচনে ভাসে ঘুম... প্রিয় ঘর...


তবু এই প্রাবাসিকী- আমাকে খায়নি বিস্মরণ
আহা দগ্ধ বিধূবন... আর ঝাঁপটে দিয়েছি ডানা
তবু তীব্র স্বপ্ন দৃশ্য- ভেসে আসে গাঢ় সম্মোহন
তাই কোনো অভিপ্রায় নেই... অর্থহীন আজ হা-না...


তবু লুব্ধ রূপায়ন- প্রাত্যহিকে পুনশ্চ অতীত
আশ্বিনের ভোরবেলা বেজেছিলো ভূমিষ্ট সঙ্গীত...


কার্তিক
কথাকে কোলাজ করি তবু কার কথা বেশি বলি
এই পর্বাহের প্রাহ্নে- কার মুখ মুখস্ত ভীষণ?
আর কোন পথে হেঁটে স্মৃতিগত দৃশ্যাবলী
এখনো উজ্জ্বল- এই এক পৃথিবীর আবাসন?


শুধু জানি- আমি কোন পাখিদের পড়শি ছিলাম
আর ওই জোনাকির জীবনীকে প্রপাঠ্য করেই
অন্ধকারে বহুবার হারিয়েছি... হন্য-ধাবমান
এই আশ্চর্য প্রতিভা- তবু ধূসরিত মুহূর্তেই...


তবু এই প্রদোষের প্রেষণায়- শাশ্বত সঙ্গীতে
কার কথা বেশি বলি... কার মুখে মার্গের স্মারক
আমার অবলীঢ় অন্বেষা- আহা অমল স্মরিতে
উল্লেখ্য, নিনাসের নির্জন স্মৃতিসৌধ... সম্পূরক!


তবু এই পার্বণের দেশে ছিলো প্রেম... পূণ্য ঘোরে
কার্তিকের কথাগুলি ঘুমিয়েছে দাসের শিয়রে...


অঘ্রাণ
যতোবার দৃশ্য ভাঙি- তারপর ভিতরে ভাসাই
এই মন পবনের নাও... ভেসে যাই কতোদূরে
শিশুবালিহাঁস... কান্ত... কোনো ঝিলে সামান্য দাঁড়াই
মুগ্ধ মনোহরে? আহা- বেজে ওঠে হাওয়ার ঘুঙুর...


এইভাবে সাজিয়েছি কল্পদ্রুমতলা- তীর্থায়ণ
তবু হৃদিপাতে শল্যহীন গায় গেয়েছি গভীর...
একে যদি ভালোবাসা বলি... শুদ্ধনাম প্রার্থিত পতন
তবু এই পতনের ভালোবাসিলাম তপোধীর...


এছাড়া অন্যান্য ধ্বনি- মূর্ছনায় ভেঙেছি পরিধি
আর এই শিলীমুখ পুড়িয়েছি ধুম্র পৌরাণিকী-
কোন প্রতিমার মর্মে, আমি এই একলব্য নিধি
শিশুবালিহাঁস- আহা প্রতিদিন ভালোবাসা শিখি...


তবু এই শস্যভূমি... অধিকন্তু শস্যহীন মনে
অঘ্রানের এতো ঘ্রাণ ভেসে যাই নাগেশ্বর বনে...


পৌষ
কখনো এমন হয়- আমি এই নীল ইশকুলে
অধ্যয়নে গিয়ে তবু ঘুমিয়ে পড়েছি কুয়াশায়...
কি তবে পাঠ্য প্রতিভা... আহা দিগন্তের সূত্র ভুলে
ওইপারে শতদল ফুটিয়াছে... ওইপারে যাই...


এই আমার প্রবাহ- দিনে দিনে বিভীষিত পাখি
প্রাতিস্বিকে ডানা মেলে দিই- আহা ডানার কাহিনী
লিখে রাখে গ্লেসিয়ার হাওয়া... হায়... লুকিয়ে থাকি
আর ওই প্রান্তরের ইশকুলে যাই প্রতিদিনই...


এইসূত্রে সর্বনাশ ঘটে যায় সংহিতা-সাধনে
অর্থাৎ যা কিছু সংগ্রহ সিদ্ধি- ফেলেছি হারিয়ে;
তবু এই সাঁকো ভেঙে নদী পার ভালোবাসি বলে
সংবেদনা রেখে যাই যাবতীয় বেদনাকে নিয়ে...


এসব অব্যয় কথা- সমুদ্রে যে শিশির জমাই
পৌষের প্রথম স্মৃতি পুড়ে গেছে ধুধু পূর্ণিমায়...


মাঘ
আমাকে নিয়েই গল্প বলি এই শীতল পূর্ণিতে
আমি তবু নৈর্ব্যক্তিক হতে গিয়ে হয়েছি বিলীন
এই পরমেষু প্রব্রাজনে- অস্মিতার পূরবীতে
ভেসে ভেসে যাই... ভাসমান... হৃদি-রাগে ভায়োলিন...


তবু এই তূষ্ণীভাব- অর্থীমগ্ন মৌল স্বরূপন
লিখে যাই আত্মস্মৃতি... শ্শানের মুর্মুর প্রতিভা...
পরিদৃশ্যে দারুদিন- দুলে ওঠে দুঃখ... ঝাউবন
আর ওই বনের গভীরে সংসার পেতেছি যদিবা-


তবে আমার কথাই আজ বলা যায় বিভূষণে!
অতএব আমি ওই গুপ্ত অমরাকে ভালোবাসি
এই পরমেষু প্রব্রাজনে... আর মুগ্ধ বিস্মরণে
ভেসে ভেসে যাই... ভাসমান... হৃদি-রাগ অভিলাসী...


আমি তবু অদ্বিতীয়... অধিরূঢ়... শোভন একাকী
মাঘ-নিশিথের কোকিল... হে আমার নিয়তি-পাখি...


ফাগুন
ধূম লেগেছে বিদ্রুমে আজ- হৃৎকমলের শীষে
মৃত্যু লিখি মহোৎসবে... আহা মুগ্ধ শরণ সাধ!
বরেষু প্রিয় বীরণ বনে- যাই মনীষায় মিশে
আহা অশ্রু এবঙ সমুদ্দুরে উধাও বিসম্বাদ...


বৃষলের এই ব্যাকুলতা... প্রার্থনা আর প্রপাত
শেষ মনোহর সুরধ্বনি- ভৈঁরো রোদন ভুল...
অতএব এই সামান্য দিন- অসামান্য রাত
প্রস্ফূটিত শূন্যতা গো! আমার ঘূর্ণি-হাওয়া-ফুল...


তবে কি আমি সৌরভে যাই প্রতিপৃথিবীর খোঁজে
বীরণ বনে মুগ্ধ শরণ- অলৌকিক এই আশা...
আমাকে তবু আমার মতোন একটি আমি বোঝে
সেই আমি তুই সমার্থক ও অমোঘ ভালোবাসা...
ফিলোমিলা... পাখি তুই, আর আমি মহৎ শিকারি
ফাল্গুনের এই সাধ আপাতত আকাশ-সঞ্চারি...


চৈত্র
আমার যা কিছু গান- পাখি তার প্রথম গায়ক
এবঙ যা কিছু দুঃখ- নদীদের সব তো বলিনি...
আমি যে কতোটা আমি... আমি তার সামান্য স্মারক
তবু এই অর্ঘ্য-মন্তু-প্রাণ আজ জন্ম-যজ্ঞে ঋণী...
আর ওই মালবিকা... প্রতিসূত্রে পুনর্জন্মদায়ী
তাকে যদি তৃষ্ণা বলি- তবু তাকে ফের বলি জল...
তাকে তবু মুহূর্ত বলেও বলি তাকে অনপায়ী-
তাকে বলি দলছুট... তবু অগোচরে একা দল...


আর ওই মেঘশিল্প... মনীষার স্নেহজ ব্যসন
আমাকে দেখায় দিব্য- দূরতম দ্রাক্ষা-পুঞ্জ-বাড়ি
ওই আমার তীর্থ-প্রদেশ... আহা পূর্ণ চন্দ্রায়ন;
আ মরি নৈবেদ্য পোড়ে প্রধুমিত প্রতিমার শাড়ি...
আমার যা কিছু কথা- কবিতায় কোন মর্মে বলি
চৈত্রের জোছনা এলে- দিও মোরে গূঢ় অন্তর্জলি...

Tuesday, September 29, 2009

ঘ. অন্যান্য গান

মধ্যা‎হ্ন কীর্তন: দুই

অধিরূঢ় এই দুপুরের দৃশ্য থেকে
তুলে আনি কিছু মৌন পাণ্ডুলিপি-
সুদূর গানের অর্থী ভেসে আসে
সে গানে মর্মর ছিলো বটে!

তবে সন্ধ্যা... চিরায়ত ভোরের প্রতিভা
দৃশ্যত দুপুরেই লিপিবদ্ধ- কীর্তনিয়া গো
বনে বনে তুমি ঝরাপাতাদের সহোদর
আমাকে কী প্রাণিত করো
নাকি পতনের শিস দিয়ে যাও...
        অলৌকিক মৌনতায়...

কেবলই দুপুরের গল্পে বিরচিত
আমার জীবনী
    আহা কাকে দিয়ে যাবো...
আর এই শিল্পকলা
        নীলিমার দেশে যে কার পায়ে জড়াবো...

নিশিদিনলিপি

আমার ডাইরির শেষ দিনগুলি
খুব ছিঁড়ে গিয়েছিলো...

আমি তবু বিসর্জন করি এই
        ব্যর্থ বৈবাহিকতা-
আর- চরণে মুদ্রিত মাথা
তবু বিচ্ছুরিত মেধার পরাগ
অর্থাৎ পুষ্প ভালোবাসি...

নিরীহ ধুলোর স্বপ্ন
তাকে তুমি চি‎হ্নিত করেছো-
আমি পুণ্য প্রজ্ঞা-ছাপ বলি...
আর জীবন গুড়িয়ে দিই
        মুঠি মুঠি...

আশ্বিনের শাদা মেঘ- আমার ডাইরি
তার শেষ দিনগুলি
খুব ছিঁড়ে গিয়েছিলো...

Monday, September 28, 2009

প্রতিভোর ষোলই নভেম্বর

নিরবতার এই নদী- এর কোন জলস্মৃতি নেই... তবু তীব্র জলেশ্বরী আর এই নিসর্গের ঢেউ... মুহূর্তের অশ্রুধারা দাস- অধিবৃত্তে একদিন সমুদ্রের ইতিহাস লেখা হবে... তোমরা বেড়াতে এসো আর স্নানস্বাদে জন্মান্তর হলে সূর্যাস্তের মহিমা উড়িয়ে... ভোরবেলা ঝিনুক কুড়িয়ে নিও...

সমুদ্রের এই পাড়ে-  এইসব গল্পগুলি- বালিসহস্রের শিশুবিন্দু আহা হেসে ওঠে ভোরবেলা... তোমাদের নেমন্তন্ন করি- পুনঃজন্ম পুণ্যতায় শুশ্রুষায় নিয়ে তবে অশ্রু দিয়ে এঁকে দিও জলস্মৃতি... অধিবৃত্তে অবিমিশ্র এই সমুদ্রের ইতিহাস লেকা হবে

আর ওই মেঘশিল্প- শিশিরের স্বপ্নবন্ধু... দূরের দেশের অভিমান- প্রতিপৃথিবীর ব্যথিত প্রবাহ... গোপনের মগ্ন গল্পে আমি যদি বসে থাকি আবহমান... সমুদ্রের ওইপাড়ে- পুণ্যাহের গানের ওপারে- ঘণ্টাধ্বনি বাজে আর পাঁজরে পাবক জ্বলে আর মৃত্যু লেখা হয় মহোৎসব...

তবু এই থই থই কাল্পনিকী... জলস্মৃতিহীন আহা মুহূর্তের অশ্রুকণা দাস- আমার জীবনী থেকে জেনে নিও বারি বিন্দু সমুদ্রের ইতিহাস... মগ্ন মৃত্যু মহোৎসব... আহা তবু ফিরে ফিরে আসে অস্মিতার জন্মদিন পৃথিবীতে- পৃথিবীর প্রতিভোর ষোলই নভেম্বর...

শীতের সংলাপ

মনে পড়ছে... পড়ছে পুন:        পুনশ্চ এক প্রবাল
মনে পড়ছে মেঘশিশুদের কথা
        নীল পাখিদের গান
        আর-
    প্রান্তরে যে দৃশ্য ছিলো প্রাচীন
    পুণ্য-পুরাণ... আহা
ও শ্রীনাথ... নদীর জলে        এমন গভীর গান
        আহা পাড়ায় পাড়ায়
        মৌন সম্প্রদান;
ছোট নদী... কালী-সন্ধ্যা... আলোর ঝাঁপি উল্টে গেলে
        দৃশ্য ভেঙে কি দেখা যায়
        ঠাকুর ঘরে শঙ্খ বাজায়
            কুমারী এক মা
            তার জীবনী... জল-যৌবন
        আমি কি জানি না?

মনে পড়ছে... পড়ছে পুন:        পুনশ্চ এক পতন
মনে পড়ছে ঝরাপাতাদের কথা
        শর্ষে ফুলের মাঠ
        আর
    শীতকুয়াশার গল্পগুলি... আহা
    অনুচ্চারিত... শাদা
সুদূর কোনো দিকে ওড়ে কী নিসর্গ শাদা-বেলুন-বাড়ি
মনে পড়ছে... আত্মজ এক        পড়শি আছেন প্রিয়
            সান্দ্র শূন্যচারী...

মুদ্রিত পোর্ট্রটে: বিনয় মজুমদার

বাড়ি থেকে বেরুলেই নীল-অক্ষ-মাঠ
ঘুম-ঘোর ভেঙে চলে আসে অশ্বমুখী পাঠ-
আরো পাঠ্য পথিমধ্যে... লতা-পাতা-ঘাস
পাখি তুই বিনয়ের বাড়ি চলে যাস্

বিনয় বাড়িতে থাকে... অধিরূঢ় একা
প্রতিদিন পৃথিবীর রেলগাড়ি দেখা...
এই যেনো সংবেদন- আবহমান
ঝরাপাতা গিয়ে তাকে করিও প্রণাম...

দূরের দেশের বৃক্ষ- পয়মন্ত শাখা
পাঁজরে গড়িয়ে চলে অবিনাশী চাকা...
এই বুঝি সংবেদন- গুপ্ত সুষমা
সামান্য চোখের নিচে অধিকন্তু অমা-

এইসব লিখি আর না লিখি অধিক
বিনয়ের বুকে হ্রাদ... রেল ঝিক্ ঝিক্

নগর কীর্তন


আরও স্মৃতির অংশ- অনুচ্চারিত... নগরীতে নন্দন উৎসব... মহান মেয়র এলে শুভ হবে বিশুদ্ধ জর্ণাল। হাওয়ায় যে বেলুন উড়ে যাবে হাওয়ায়- দূরে... প্লাস্টিক ইল্যুশনে... বেলুনের রঙে তবু সমুজ্জ্বল মেয়রের সানগ্লাস...

তাই কীনা যথারীতি কাগজের স্টিল আমাদের ঘরে ঘরে হামাগুড়ি দেয় আর ধাবমান দিনের রোদ্দুর শেষবার উঁকি মারে অ্যাভিনিউ-অ্যাপার্টের অনচ্ছ আকাশে... তবু সোডিয়াম রজনীর শেষে ড্রেনে ড্রেনে যে নিরোধ ভাসমান- আরও স্মৃতির কণা- কোন মর্মে নিহত আমার ভাই, নিহত পারুল বোন... অকাল প্রয়াত সিভিলাইজেশন...

তীর্থযাত্রী

ঈশ্বর-দীর ইস্টিশন থেকে
অন্তরনগর ট্রেন যাবে
আ-দি-গ-ন্ত-পু-র

তিনি আজ তীর্থযাত্রী
এই শীতে কুয়াশামুখর
একা তবে নিজের সঙ্গে
    লুব্ধ-মুগ্ধ-রাত্রি
অপূর্ব নির্জন বসেছেন!

আহা অন্তরনগর ট্রেন!!

বৃষ্টি থেকে বিষাদিত বুদবুদ

এমন বৃষ্টির সাথে
আমারও সম্পর্ক ছিলো বনে বনে
        দূর বিন্দুপুরে...

এমন মৃগয়া গানে- আজ এই
আধুনিক বৃষ্টি থেকে বিরচিত নিদ্রা-অভিজ্ঞানে
আমিও বন্দনা করি- সেইসব বৃষ্টির কাহিনী...
কোনোদিন বিধবার শাড়ি পরে
        বৃষ্টি এসেছিলো
পাড়াগাঁর প্রদগ্ধ সংসারে
সেই স্বর্গস্মৃতি হতে এতোটা বয়স হলো...
    আহা! উত্তরের মেঘ...
        মন্দ্র মনোভূমি...


এমন অঝোর দিনে
অগোচরে ফুটিতেছে দগ্ধ ব্যাকুলতা- যেনো
আমারও সম্পর্ক ছিলো বনে বনে
        দূর বিন্দুপুরে...
বৃষ্টি আমার বোন
আজন্ম বিধবা নারী
কোনো রঙে সাজাতে পারি না তাকে...
        আহা উত্তরের মেঘ
            সান্দ্র মনোভূমি...

ধূলি শহরের গান

ধূলি শহরের পথে        ঘুরি তবু আজ
আমাকে পথিক বলেনি ওই প্রত্ন-চিলেকোঠা...

তবু এই তমোহরে জোনাকি সুদূর...

আর ওই সিলিকন চিপসের গান
ও মাসুদ খান, মনে পড়ে
ক্লেদজ কুসুম থেকে কবি খুব কান্ত
        করুণ ছিলেন...

এইখানে অন্তর্লীন দীপাবলি জ্বলেনি... কোজাগরে

ধূলি শহরের পথে        ঘুরি তবু আজ
আমাকে ফিনিক্স বলেনি ওই মেট্রো-সোডিয়াম...

খণ্ড স্মৃতি

সন্ধ্যা আসে, আর ওই অরাত্রি ম্লানিমা
পান করি প্রতিস্বাদ... একদিন
প্রসীদ প্রসীদ বলে
        আর্দ্র ছিলাম...

আজ তবু তারাদের কথা বলি
প্রিয় পাখিদের কথা বলি
অপ্রিয় আঁধারে... একদিন
অপার নীলিমা বলে
        হার্দ্য ছিলাম...

আর ওই নিরবতা- রাত্রিকালীন সঙ্গীত
কবে কবে
একাদের শরণ রচনা
        রচনা করেছি বলে
কোনোদিন মানুষ ছিলাম
এই কথা মনেই পড়ে না...

Sunday, September 27, 2009

উত্তর জন্ম-সাধ

অনেকদিন পরের কথা: উত্তর-পুরাণে আমি ওই
অবিভাজিত গান আর বিদ্রুম দ্যোতনার সন্ধানে
হৃদি-ঘরে প্রবেশেই দেখিবো- মৃতুঘুম প্রবাহিত...

অতএব এইসব জাগরণ অনর্থক নহে... আর এই
শুভরাত্রি সেইসব অনুষঙ্গে ঘনীভূত- যেইখানে
অশ্রুজলে আমি কাগজের নৌকা... শিশুতরী...
আর তুমি মোরে ভাসাইয়া দিও... আঁচলে উড়াইও...

প্রত্নলাবণ্য

যাদুঘরে যাই আর অগোচরে ছুঁয়ে আসি
গান্ধারে তোমার মুখ
    প্রত্নলাবণ্য
    স্নিগ্ধ শিল্পকলা...

প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরি তবু এই বিস্মরণ
এড়াতে পারি না আহা
কত পথ উড়ে এসেছিলো এই আমার পায়ে
আর কত পাখি উড়ে গিয়েছিলো
        যেনো কোন কোন দিকে...

দিকের দ্রষ্টব্য যেনো ঝাঁপসা মিরর
আর সেই লাঠিমের অভিজ্ঞান...

বিস্মরণের এত পরে তবু শিলিভূত
স্নিগ্ধ শিল্পকলা
    প্রত্নলাবণ্য
        গান্ধারে তোমার মুখ
            অগোচরে ছুঁয়ে যাই...

মধ্যা‎হ্ন কীর্তন: তিন

মহিমা কীর্তন করি এই মৌল বিষাদের দিন
উত্তরে মেঘের দেশ
        ও মেঘের মেয়েরা
শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে
        দেক্ষিণে যাবো না আমি
বাঙলা কবিতা ধরে বিনয়ের বাড়ি চলে যাবো...

ত্রিবেণীর নীলকুঠি... স্তব্ধতার স্থাপত্য থেকে
শোনা যায় প্রত্নপাখিদের গান-
আমি সেই পাখিদের ভাষা পাঠ্য করি
জলের সুদূরে বসে
        ও মেঘের মেয়েরা
অবিনাশী এক দুপুর খেয়েছে আমায়...

অনুণ এই দুপুরের দৃশ্য থেকে আমি তবু
মহিমা কীর্তন করি এই মনোটোনাসের দিন...
উত্তরে মেঘের দেশ
                   শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে

আমি তবু দেক্ষিণে যাবো না
অপার নীলিমা ধরে নির্লিপ্তির বাড়ি চলে যাবো...